Cosmos
Review
কসমস প্রথমত কার্ল সেগানের একটা বিখ্যাত টিভি ধারাবাহিক। বিষয়বস্তু আমাদের মহাবিশ্ব। বইটি কিছুটা তার লিখিত সংস্করণ।
কসমস (cosmos) শব্দটি গ্রীক, অর্থ শৃঙ্খলা, chaos এর বিপরীত শব্দ এটি। মহাবিশ্বের শৃঙ্খলার সৌন্দর্য বইটির উপজীব্য।
বইটির তথ্যগুলোর কথা বলতে গেলে যারা সমসাময়িক বিজ্ঞানের সব খবর রাখেন তাদের কাছে পুরনো খবর তবে এখনো প্রাসঙ্গিক সাধারণ মানুষের জন্য। আর শুধু বিজ্ঞান না, বিজ্ঞানের ইতিহাসও বেশ চমৎকারভাবে উঠে এসেছে। উঠে এসেছে আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রজ্ঞা যা ধর্মীয় ও ভাববাদী দর্শন বারবার দমন করতে চেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস আর সেগানের চমৎকার লেখনীর জন্য বইটা আমার ভালো লেগেছে।
উঠে এসেছে নানান কথা। তবে সবগুলোই বুঝি কেন্দ্রে রাখলো আমাদের পরিচয়। এই মহাবিশ্বে আমরা কী, কতটুকু ক্ষুদ্র, কতটুকু মূল্যবান, কতটুকু ক্ষমতা আমাদের এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে বৈজ্ঞানিক সত্যের সাথে। প্রাসঙ্গিকভাবেই উঠে এসেছে মানুষ নিজের ক্ষুদ্রতা অস্বীকার করতে, কোনো ঐশ্বরিক স্বত্তার মান বজায় রাখতে কীভাবে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
মানুষ খুব আত্মকেন্দ্রিক স্বাভাবিকভাবে। সমাজ নেহায়েতই দায়ে পড়ে তৈরী করা। তাই নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দেখার ইচ্ছে প্রবল। কিন্তু বিজ্ঞান কোনো ব্যক্তি কেন, কোনোকিছুরই ধার ধারে না। যারা সত্যসন্ধানী তাদের কাছে ক্ষুদ্রতা পীড়াদায়ক না। তাদের চোখে মহাবিশ্ব তার সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয়। যেমন টলেমি বলেছেন,[1]
Mortal as I am, I know that I am born for a day. But when I follow at my pleasure the serried multitude of the stars in their circular course, my feet no longer touch the Earth…
সেগান বারবার চেষ্টা করেছেন সেই সত্যের সৌন্দর্যের স্বাদ দিতে।
আমাদের দেশে, এবং বোধহয় সারাবিশ্বেই সাধারণ মানুষ বিজ্ঞান সম্পর্কে কম জানেন। অন্তত বিজ্ঞানের দর্শন আমাদের দেশে প্রচণ্ড অবহেলিত একটা বিষয়। লোকে বিজ্ঞান বিভাগে চিকিৎসক বা প্রকৌশলী হতে পড়ে। সাধারণ মানুষ জানে বিজ্ঞানে ফ্যান চলে, বাতি জ্বলে। এই বইটায় বিজ্ঞানের দর্শন বলা হয়েছে সহজবোধ্যভাবে।
ভাববাদী দর্শনের রক্ষাকর্তারা, বিশেষ করে ধর্মপ্রচারকরা মানুষের মূল্যবোধের জন্য ধর্ম অপরিহার্য, বিজ্ঞান অব্যবহারযোগ্য বলেন প্রায়শই। বিজ্ঞান মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে অপারগ, কেননা এটি তার কাজ না। তবে এই জ্ঞান আমাদের মূল্যবোধগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আরো নিঁখুত তথ্য দিতে পারে, তার ব্যবহারে দিতে পারে সাবলীলতা। আর ধর্ম? গুণে দেখবেন, ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ কত মানুষের মৃত্যুর কারণ এ পর্যন্ত। কার্ল সেগান এই বইতে বিজ্ঞানী হিসেবে তার নিজস্ব মূল্যবোধ জানিয়েছেন,
লক্ষ্য করুন পাঠক, আপনার ক্ষুদ্রতা সত্ত্বেও আপনি গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ আপনার বিরুদ্ধচারী মানুষটি। এমনকি কোনো কারণই হত্যার জন্য যথেষ্ট নয়। এই মানবিকতা একদিন মহাবৈশ্বিকতায় পৌঁছে যাবে আমাদের বৈজ্ঞানিক সত্যদর্শনের আলোকে।
আগেই বলেছি, বইয়ের লেখা সাবলীল ও আকর্ষণীয়। এটা হচ্ছে সেইধরণের বই যা প্রত্যেকের পড়া উচিত। প্রত্যেকের।
* Spacecraft missions to nearby planets * The Library of ancient Alexandria * The human brain * Egyptian hieroglyphics * The origin of life * The death of the sun * The evolution of galaxies * The origins of matter, suns and worlds The story of fifteen billion years of cosmic evolution transforming matter and life into consciousness, of how science and civilisation grew up together, and of the forces and individuals who helped shape modern science. A story told with Carl Sagan's remarkable ability to make scientific ideas both comprehensible and exciting.